Friday, December 6, 2013

জেনে নিন ফ্যাক্টরীতে কিভাবে আইসক্রিম তৈরী হয় এবং সেই সাথে সহজ উপায়ে ঘরে বিভিন্ন স্বাদের আইসক্রিম ও গ্রীন টি আইসক্রিম তৈরীর কলাকৌশল.?.

আইসক্রিম-দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে এমন একটা জিনিস, আর গরমে তো কথাই নেই। ছোট বেলায় আইসক্রিম আইসক্রিম ডাক শুনে আইসক্রিমওয়ালার কাছে যেতে মনটা আনচান করেনি এমন কেউ কি আছেন??  মনে হয় নাই । এতো গেলো ছোটবেলার কথা, এরপর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় , এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও নাতিনাতনিদেও সাথে আইসক্রিম খান অনেকেই। সেই আইসক্রিমটা কিভাবে তৈরী হয় সেটা জানতে চান ?


তাহলে চলুন দেখে নেই কিভাবে আইসক্রিম তৈরী করা হয় ফ্যাক্টরীতে

প্রথমেই আমরা জেনে নেই আইসক্রিম তৈরীর কাঁচামালগুলো কি কি?

  • হাইড্রোজেনেড কোকোনাট অয়েল /পাম কারনাল অয়েলীন ।
  • মিল্ক পাউডার (ফুলক্রীম )
  • ইমালসিফায়ার এবং স্ট্যাটাবলাইজার
  • ফুড কালারিং
  • ফ্লেভারস : ভ্যানিলা , স্ট্রবেরী, অরেঞ্জ, কফি ইত্যাদি।
  • গ্লুকোজ
  • কুয়ার গাম
  • কোকোয়া পাউডার
  • আইসক্রিম ক্টিক



এবার চলুন জেনে নেই প্রস্তুত প্রণালী এর ধাপ গুলো:

  • ব্লেনডিং অব দ্যা মিক্স ইনগ্রিডিয়েনডস
  • পাস্তুরাইজেশন
  • হোমোজেনাইজেশন
  • এইজিং দ্যা মিক্স
  • এডিং লিকুইড ফ্লেভার , কালার
  • ফ্রিজিং
  • হার্ডেনিং
  • কোয়ালিটি টেস্টটিং
  • প্যাকেজিং

ব্লেনডিং অব দ্যা মিক্স ইনগ্রিডিয়েনডস:


প্রথমেই স্কিম মিল্ক / পাউডার মিল্ক , ইমালসিফায়ার , নন ফ্যাট, একএে ব্লেনডিং মেশিনেমেশানো হয় – – একে বলে ব্লেনডিং । অনেক সময় সলিড উপকরণগুলো কে লিকুইড উপকরণের সাথে মেশানো পূর্বে একবার ব্লেনড করে নেয়া হয় ।

পাস্তুরাইজেশন:


পরবর্তীতে ব্লেনডিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত মিশ্রণ যাকে বলে আইসক্রিম মিক্স কে পাস্তুরীকরণ করা হয় । আইসক্রিমকে ১৫৫ μ ফারেনহাইড / ৬৮μসেলসিয়াস এ পাস্তুরীকরণ করা হয় এবং প্রায় ৩০ মিনিট পাস্তুরীকরণ করা হয় । ফ্যাক্ট্যরীতে দুই ধরনের পাস্তুরাইজার বেশি ব্যবহার করা হয় – ব্যাচ পাস্তুরাইজার এবং ভ্যাট পাস্তুরাইজার ।

হোমোজেনাইজেশন:


পরবর্তী ধাপে আইসক্রিম মিক্সকে হোমোজেনাইজেশন করা হয় ( ২৫০০-৩০০০পিএসআই)। ,হোমোজেনাইজেশন হলো কেনো মিশ্রণের উপাদান কে সমরূপে মিশ্রিত করা , এর ফলে মিশ্রণ মসৃণ এবং ক্রীমি হয় , ইমালসিফায়ার ও এবং স্ট্যাটাবলাইজার আরো ভালভাবে মিশ্রিত হয় । হোমোজেনাইজেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যার উপর আইসক্রীমের মান অনেকখানি নির্ভরশীল ।

এইজিং দ্যা মিক্স:


পরবর্তীতে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে প্রায় ৪ ঘন্টা বা সারারাত হোমোজেনাইজড মিক্সড কে এইজিং করা হয় । এইজিং এর ফলে মিল্ক ফ্যাটগুলো ভেঙ্গে আংশিক দানাদার হয় ।
এডিং লিকুইড ফ্লেভার , কালার : এই পর্যায়ে লিকুইড ফ্লেভার এবং কালার যোগ করা হয় ।


ফ্রিজিং:


এরপর মিশ্রণকে ফ্রিজারে রেখে দেয়া হয় , ভিতরের তাপমাএা – ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখা হয় এবং ফ্রিজিং এজেন্ট হিসেবে তরল এমোনিয়া ব্যাবহার করা হয় । যদি সিঙ্গেল ব্যাচ ইলেক্ট্রফ্রিজার ব্যাবহার করা হয় তবে ১৫-২০ মিনিটেই ফ্রিজিং হয়ে যায় ।

হার্ডেনিং:


এই ধাপে আইসক্রিম কণ্টেইনারে রাখা হয় । ফ্যাক্টরী মেশিনগুলো তা সরাসরি কার্টনে ভরে দেয় অথবা বিভিন্ন আকার প্রদান করা হয় । মেশিনগুলো থেকে  আইসক্রিম বের করে – ২০ডিগ্রী ফারেনহাইড ফ্রিজারে রাখা হয় যাতে শক্ত আকার ধারন করে ।

কোয়ালিটি টেস্টিং:


এই ধাপে আইসক্রীমের মান যাচাই করা হয় ।

প্যাকেজিং:

সবশেষে অটোমেটিক মেশিনে এ প্যাকেজ করে ফ্রিজে সংরক্ষন করা হয়। একেক ফ্যাক্টরীর তৈরী আইসক্রিম এর ফ্রিজিংপয়েন্ট একেক একেক রকম , তাই যে কোম্পানি আইসক্রিম তৈরি করে তারাই সেই আইসক্রিম এর জন্য রেফ্রিজারেটর দিয়ে থাকে ।

আইসক্রিম

এখন জেনে নেই সবচেয়ে সহজ উপায়ে কম উৃপকরণ দিয়ে কিভাবে ঘরে বসে আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন রকমারি স্বাদের আইসক্রিম


  • প্রথমে দেখতে হবে আপনি কোন ফ্লেভারের আইসক্রিম খেতে চান, আম, স্ট্রবেরী , চকোলেট ,কলা, নাকি আপেল ফ্লেভারের আইসক্রিম ।
  • ধরুন আপনি চান ম্যাংগো ফ্লেভারের আইসক্রিম খেতে চান , তাহলে আপনাকে প্রথমে ৪০০ গ্রাম ম্যাংগো স্লাইস নিতে হবে , পরিমান টা আপনি ইচ্ছে করলে কিছুটা পরিবর্তন করতে পারেন ।
  • ব্লেনডারে ম্যাংগো স্লাইস ,২ কাপ ফ্রেশ ক্রীম (লিকুইড),৩ কাপ মিল্ক (লিকুইড), , খুব সামান্য পরিমাণ ভ্যানিলা এসেন্স , ১/২ কাপ চিনি দিয়ে দিন । যদি আপনি চকোলেট ফ্লেভার চান তাহলে কোকোয়া পাউডার যোগ করে দিন । এবার সবগুলো উপকরণ একসাথে ব্লেনডারে ব্লেনড করে নিন ।
  • এবার ব্লেনডার থেকে একটি বাটিতে ব্লেনডেট মিশ্রণ ঢেলে নিন এবং তা ৪৫ মিনিট রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন ।
  • আইসক্রিম খাওয়ার ১০ -১৫ মিনিট আগে রেফ্্িরজারেটর থেকে বের করে পছন্দমত
  • সাজিয়ে পরিবেশন কক্ষে ফেলুন।

গ্রিন টি আইসক্রিম:


উপকরণ:

  • ২ টেবিল চামচ গ্রিন টি পাউডার
  • ২-৩ কাপ চিনি
  • ৩টি ডিমের কুসুম
  • ৩-৪ কাপ হেভি ক্রীম

প্রস্তুত প্রণালী:

  • প্রথমে ১টি ছোট বাটি নেন, তাতে ২টেবিল চামচ গ্রিন টি পাউডার এবং ২টেবিল চামচ চিনি একসাথে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  • একটি প্যানে ৩-৪ কাপ তরল দুধ চুলায় গরম করতে থাকেন ।খেয়াল রাখবেন যেন প্যানে লেগে না যায়। অনবরত নাড়তে থাকুন।
  • অন্য ১টি বাটিতে ৩টি ডিমের কুসুম এবং ১/২ কাপ চিনি মিশিয়ে নিন।
  • কয়েক চামচ দুধ গ্রিন টি পাউডারে যোগ করে পেস্ট বানিয়ে নিন।পেস্টটা যখন মিহি হবে তখন তা গরম দুধে দিয়ে দিবেন।
  • এরপর কুসুম এবং চিনির মিশ্রণ আস্তে আস্তে প্যানে দিয়ে দিন,এবং নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না ঘন না হয়।
  • ঘন হয়ে গেলে আগুন নিভিয়ে দিন এবং মিশ্রণ ভাল ছাকনি দিয়ে ছেকে নিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
  • ঠান্ডা হয়ে গেলে তাতে ৩-৪ কাপ হেভি ক্রীম যোগ করে দিন।
  • পরবর্তীতে এই মিশ্রণকে ১ টি স্টীলের বাটিতে ঢেলে নিন এবং রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন।
  • ৪৫ মিনিট পর তা রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে ভালোভাবে নেড়ে আবার রেখে দিন। এভাবে ৪ বার করতে হবে।
  • হয়ে গেল আপনার গ্রিন টি আইসক্রিম।

বিশে দ্রষ্টব্য :



  • আইসক্রিম আমাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। যারা অনেক কষ্ট করেও ওজন বাড়াতে পারছেন না তারা বেশি ক্যালরির আইসক্রিম খেতে পারেন। আর যাদের ওজন বেশি তারা একটু কম খাওয়াই ভালো।
  • বেশি আইসক্রিম খেলে ডায়াবেটিস, হাই-কোলেস্টেরল, অবেসিটি হতে পারে।
  • আইসক্রিম টনসিল অপারেশনের পর রক্তক্ষরণ বন্ধে সাহায্য করে।
  • আমরা যে কোন আইসক্রিমগুলো খাই তা বাংলাদেশে তৈরী হয়না, বিদেশ থেকে আনা হয় কারণ কোন তৈরীর মেশিন আমাদের দেশের ফ্যাক্টরীগুলোতে নাই।
  • জুলাই মাসের ৩য় রবিবার আমেরিকাতে জাতীয় আইসক্রিম দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
  • ঘরে তৈরী আইসক্রীমের মান ফ্যাক্টরীতে তৈরী আইসক্রিমের চেয়ে অনেক ভালো।

No comments:

Post a Comment