Saturday, October 5, 2013

আজ স্টিভ জবসের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী - 05 - 10 -2011/ 05 - 10 - 2013

আজ স্টিভ জবসের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ৫ অক্টোবর প্রযুক্তি জগতের বিস্ময়কর উদ্ভাবক স্টিভ জবসের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র ৫৬ বছরের। অসম্ভব সৃষ্টিশীল এই মানুষটির প্রাতিষ্ঠানিক প্রযুক্তিগত বিদ্যা খুব বেশি ছিল না। কৈশোর থেকেই ক্ষ্যাপাটে, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং লক্ষ্যের দিকে একাগ্র। এর ফলে পৃথিবীবাসী পেয়েছে এক বিস্ময়কর প্রযুক্তির জগৎ। তিনি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন পিসি, ট্যাবলেট পিসি, অ্যানিমেশন, গান শোনার যন্ত্র, মোবাইল ফোন, খুচরা বিপণিকেন্দ্র ও ডিজিটাল পাবলিশিংয়ে। অনেকে তাকে তুলনা করেন টমাস আলভা এডিসনের সঙ্গে। কেউ কেউ তার মধ্যে খোঁজেন হেনরি ফোর্ড, ওয়াল্ট ডিজনির ছায়া। কারও কারও মতে, প্রযুক্তিপণ্য ও ব্যবসায় স্টিভ জবসের অবদান এদের চেয়েও বেশি।

 
 
১৯৫৫ সালের ২৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেন তিনি। স্পর্শ
 অনুভূতি সমৃদ্ধ স্মার্ট ডিভাইসের জনক অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আইফোন, আইপ্যাডের মতো পণ্য বাজারে ছেড়ে চমকে দিয়েছেন। বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলেরও স্টিভ জবস বিহীন দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। অথচ এ সময়ে অ্যাপল দেখাতে পারেনি নতুন কোনো চমক। আইফোন এবং আইপ্যাডেই যেন থেমে রয়েছে অ্যাপলের জাদু। শরীর নিয়ে যেন আজীবনের অবহেলা ছিল তার। আর নিয়তি যেন সেই সুযোগটি লুফে নিল। ২০১১ সালে ৫ অক্টোবর চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি।
ম্যাকওয়ার্ল্ড সম্মেলনে স্টিভ জবস
স্টিভ জবস। পুরোনাম স্টিভেন পল জবস। যুক্তরাষ্ট্রের একজন উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক। তাকে পার্সোনাল কম্পিউটার (personal computer) বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়। তিনি স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন -এর সাথে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি পিক্সার এ্যানিমেশন স্টুডিওস-এরও প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৮৫ সালে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সদস্যদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে তিনি অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের থেকে পদত্যাগ করেন এবং নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে অ্যাপল কম্পিউটার নেক্সট কম্পিউটারকে কিনে নিলে তিনি অ্যাপলে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯৫ সালে টয় স্টোরি নামের অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন।

জীবনবৃত্তান্ত
জবস জন্মেছিলেন সান ফ্রান্সিস্কোতে এবং পরে পল ও ক্লারা জবস তাকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তাকে নামকরণ করা হয় স্টিভেন পল জবস। কিন্তু তার প্রকৃত পিতা-মাতা ছিলেন জোয়ান ক্যারোল এবং আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি (সিরিয়া থেকে স্নাতকোত্তর ছাত্র ছিলেন।পরবর্তীতে রাস্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েছিলেন)। যারা পরবর্তীতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাদের ঘরে জবস-এর বোন সাহিত্যিক মোনা সিম্পসন জন্মান।

জবস কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুলে এবং হোমস্টিড হাই স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি প্রায়ই হিউলেট-প্যাকার্ড কোম্পানির লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন। যেখানে পরবর্তীতে তিনি গ্রীষ্মকালীন কর্মচারী হিসাবে স্টিভ ওজনিইয়াকের সাথে কাজ করেন। ১৯৭২ থ্রিস্টাব্দে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং রীড কলেজ়ে ভর্তি হন। যদিও তিনি পরবর্তীতে কলেজ ছেড়ে দেন তার পরেও তিনি ক্যালিগ্রাফীসহ আরো কিছু ক্লাসে যোগদান করেছিলেন। এই সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল "যদি আমি ওই কোর্সে না যেতাম তবে ম্যাকের কখনোই বিভিন্ন টাইপফেস বা সামঞ্জস্যপূর্ণ ফন্টগুলো থাকতো না।"
১৯৭৪ সালে জবস ক্যালির্ফোনিয়াতে পুনরায় চলে আসেন। এ সময় তিনি নিয়মিত ওজনিয়াকের সাথে হোমব্রিউ কম্পিউটার ক্লাবের সভাগুলোতে উপস্থিত থাকেন। তিনি ভিডিও গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আটারিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি এসময় মূলত ভারতে যাবার জন্য অর্থ জমানোর চেষ্টা করছিলেন। জবস ভারতে নিম কারোলি বাবার কাইনিচি আশ্রমে তার বন্ধু ড্যানিয়েল কটকের সাথে ভ্রমন করেন। আধ্যত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি ভারতে আসেন ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত হন।
অ্যাপল প্রতিষ্ঠা
১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকার উদ্যোক্তা মাইক মার্ককুলার প্রথম অ্যাপলে অর্থ বিনিয়োগ করেন। অ্যাপল প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৭১ সালে ইলেকট্রনিক্স হ্যাকার ২১ বছরের ওজনিয়াকের সাথে জবসের পরিচয় হয়। জবসের তখন বয়স ছিল মাত্র ১৬। ১৯৭৬ সালে তারা অ্যাপল ১ নামের প্রথম কম্পিউটার অবমুক্ত করে।

১৯৭৮ সালে মাইক স্কটকে প্রথম সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে কোমল পানীয় পেপসির সাবেক কর্মকতা জন স্কালীকে সিইও হিসেবে নিয়োগ করেন জবস। আশির দশকের শুরুতে জবসের আগ্রহেই অ্যাপল লিসা নামের ৯,৯৯৫ ইউএস ডলার মূল্যের ডেক্সটপ কম্পিউটার বাজারজাত করা শুরু করে। কিন্তু অধিক মূল্যের কারনে লিসা বাজারে সুবিধা করতে পারে নাই।
১৯৮৩ সালের অক্টোবরে জবস নতুন ধরনের ডেক্সটপ ম্যাকিন্টশ নির্মানের ঘোষনা দেন। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপল ম্যাকিন্টশের বাজারজাতকরন শুরু হয়। ১৯৮৫ সালের মে মাসে জবসকে অ্যাপলের ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। অক্টোবরে জবস অ্যাপল থেকে পদত্যাগ করেন এবং নেক্সট কম্পিউটার নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

নেক্সটষ্টেশন
অ্যাপল কম্পিউটার ছাড়ার পর জবস ১৯৮৫ সালে ৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে নেক্সট (NEXT) কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। নেক্সট কম্পিউটার থেকে জবস ১৯৯০ সালে নেক্সটষ্টেশন নামের পিসি বাজারজাত করন শুরু করেন। এই ওয়ার্কষ্টেশন গুলোর দাম ছিল ৯,৯৯৯ মার্কিন ডলার।

পিক্সার ও ডিজনী
১৯৮৬ সালে জবস পিক্সার, সাবেক নাম দ্য গ্রাফিক্স গ্রুপ, লুকাস ফিল্ম এর কাছ থেকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ক্রয় করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই জবস ডিজনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কম্পিউটার অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র বানাতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে মুক্ত পাওয়া টয় ষ্টোরি চলচ্চিত্রটি প্রথম চলচ্চিত্র যেখানে স্টিভ জবস এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে জবস পিক্সারের ক্রিয়েটিভ প্রধান জন লেস্যেটার এর সাথে মিলে অনেকগুলো চলচ্চিত্র নির্মান করেন। কয়েকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র হল: এ বাগস লাইফ (১৯৯৮), টয় ষ্টোরি ২ (১৯৯৯), ফাইন্ডিং নিমো (২০০৩), টয় ষ্টোরি ৩ (২০১০) প্রভৃতি।

অ্যাপলে প্রত্যাগমন
১৯৯৬ সালে অ্যাপল ঘোষনা দেয় ৪২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেক্সট কম্পিউটার ক্রয়ের। জুলাই ১৯৯৭ সালের পরে স্টিভ জবস পুনরায় প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করলেও ২০০০ সালে প্রধান সিইও হিসেবে নিয়োগ পান। স্টিভ এ সময়ে কম্পিউটার যন্ত্রপাতি নির্মাণ ছাড়াও ডিজিটাল বিনোদনের নানা উপকরন নির্মাণে মনোযোগ দেন। তিনি ২৯ জুন ২০০৭ সালে প্রথম আইফোন বাজারজাত করন শুরু করে। নান্দনিকতার সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রনে বিনোদনের জগতে স্টিভ জবস একে একে প্রবর্তন করেন আইপড, আইপ্যাড।

পুনরায় অ্যাপল ত্যাগ
২০১১ সালের আগষ্টে জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে পদত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যান।

জবস পাল্টে দিয়েছেন তিনটি ‘C’
জবস পাল্টে দিয়েছেন মানবসভ্যতার তিনটি ‘C’—কীভাবে মানুষ ‘Connect’, ‘Communicate’ ও ‘Consume’ করে। অথচ টাকা-পয়সার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারেননি। আরেক স্টিভ, স্টিভ ওজনিয়াকের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল ইনকরপোরেট!

স্টিভের কাজ ছিল গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে বেড়ানো
অ্যাপল কম্পিউটার শুরু করার পর স্টিভ জবসের কাজ ছিল বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে বেড়ানো। পলো আলটোতে জেরক্স কোম্পানির একটি গবেষণাগারে জবস প্রথম এমন একটা বস্তু দেখেন, যা এখন মাউস নামে পরিচিত। দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূর দেখতে পাওয়া মানুষটি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন, এই ছোট্ট যন্ত্র এবং এর সঙ্গে কম্পিউটারের পর্দায় ছবি দিতে পারলেই সাধারণ মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে। সেটি ছিল ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারের চিন্তা। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে পর্দায় ছবি আর মাউস নিয়ে ম্যাকের আবির্ভাবের পর থেকে পাল্টে গেছে কম্পিউটারের জগৎ।

সব নতুন পণ্যই স্টিভ ব্যবহার করতেন
জবসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল—ব্যবহারকারীর হাত আর চোখ দিয়ে পণ্যকে বিচার করা। এ কারণে সব ধরনের নতুন পণ্য তিনি ব্যবহার করতেন। ভাবতেন, কীভাবে বিষয়গুলো আরও সহজ করা যায়। আইফোনে যদি কোনো সুইচ না থাকত, তাহলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। কিন্তু প্রকৌশলীরা তাঁকে বুঝিয়েছেন, কমপক্ষে একটি সুইচ বা বাটন থাকা অপরিহার্য।

দুঃখিত স্টিভ। তোমার ম্যাজিক এখানে কাজে লাগবে না
অ্যাপল স্টোর চালুর পর ইকোনমিস্ট পত্রিকায় শিরোনাম করে, ‘দুঃখিত স্টিভ। তোমার ম্যাজিক এখানে কাজে লাগবে না।’ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছানোয় স্টিভ ম্যাজিক অনেক বেশি মাইলেজ দিয়েছে অ্যাপলকে। গ্যারেজ থেকে উঠে আসা অ্যাপল ইনকরপোরেটেড বাজার মূলধন এখন ইন্টেল আর মাইক্রোসফটের সম্মিলিত বাজার মূলধনের চেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাপী অ্যাপলের রয়েছে কয়েক লাখ কর্মী। কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা, অ্যাপল তার মিউজিক স্টোরের মাধ্যমে বিশ্বের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী এখন নিজেদের দিন বদলের রাস্তা খুঁজে নিচ্ছেন।

সম্পদ
জবস অ্যাপল কম্পিউটারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বছরে মাত্র ১ মাকিন ডলার বেতন গ্রহন করতেন।[১৯] কিন্তু তার কাছে ছিল অ্যাপলের ৫.৪২৬ মিলিয়ন শেয়ার এবং ডিজনীর ছিল ১৩৮ মিলিয়ন শেয়ার। ২০১০ সালের ফরবেসের (FORBES)  হিসেবে তিনি ৮.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে ৪৩তম মার্কিন ধনী নির্বাচিত হন।

উদ্ভাবন
অক্টোবর ২০১১ পর্যন্ত স্টিভ জবসের নামে ৩৪২ টি আমেরিকান উদ্ভাবনের সত্ত্ব অধিকার রয়েছে।

সম্মাননা
স্টিভ জবস ১৯৮৫ সালে স্টিভ ওজনিয়াকের সাথে প্রথম ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজি লাভ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১১ সালে ৩২ জনের নাম 'পার্সন অফ দ্য ইয়ার' হিসেবে মনোনীত করে। এ তালিকায় - আঙ্গেলা ম্যার্কেল, বারাক ওবামা, সিলভিও ব্যার্লুস্কোনি, লিওনেল মেসি প্রমূখ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি তিনিও স্থান পেয়েছেন।

নিজের উদ্ভাবন নিয়ে ভয় ছিল স্টিভ জবসের
নিজ প্রজন্মের অন্যতম সেরা উদ্ভাবক ছিলেন অ্যাপেল কোম্পানির কর্ণধার স্টিভ জবস। বর্তমান কমপিউটার প্রযুক্তির বাজারে তাঁর উদ্ভাবিত পণ্যগুলোই সেরার তালিকা দখল করে রেখেছে। কিন্তু ‘ডেইলি মেইল’-এর এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, জীবনকালে স্টিভ জবস সব সময় এটা ভেবে ভয় পেতেন যে, তাঁর উদ্ভাবিত পণ্যগুলো খুব সহজেই পুরোনো হয়ে যাবে এবং লোকে সেগুলোকে আর মনে রাখবে না। এক সাক্ষাত্কারে স্টিভ জবস বলেছিলেন, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন যে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে, তাতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্রগুলো অচল হয়ে যাবে।
১৯৯৪ সালে ৩৯ বছর বয়সে দেওয়া ওই সাক্ষাত্কারে জবস বলেন, ‘যখন আমার বয়স ৫০ বছর হয়ে যাবে, তখন আমার সব কাজ সেকেলে হয়ে যাবে।’ জবসের ওই সাক্ষাত্কার কিছুদিন আগে ইউটিউবে পোস্ট করা হয়েছে। ২০১১ সালে মৃত্যুর আগে তিনি আইপড, আইফোন ও আইপ্যাডের মতো জনপ্রিয় যন্ত্র উদ্ভাবন করে যান। তিনি বলেন, ‘এটি (প্রযুক্তির বাজার) এমন কোনো ক্ষেত্র নয় যেখানে কোনো একজন শিল্পী এমন এক চিত্র আঁকবেন, যা মানুষ শত শত বছর ধরে দেখবে বা এমন কোনো গির্জাও কেউ তৈরি করবে না, যেটিকে মানুষ কয়েক শতাব্দী পরে প্রশংসা করবে।... এটি এমন এক ক্ষেত্র যেখানে প্রত্যেকে নিজের কাজটুকু করে এবং বছর দশেকের মধ্যে তা হারিয়ে যায় এবং সত্যিই ১০ বা ২০ বছর পর সেগুলোকে আর ব্যবহার করা যায় না।’ জবস বলেন, ‘পলি জমে জমে যেমন পাহাড় হয়, এটিও তেমন। আপনারা সবাই মিলে এক পাহাড় গড়ে তুলছেন, সেখানে আপনি আপনার পলিটুকু দিলেন। এভাবে ওই পাহাড়টিকে আপনি একটু উঁচু করলেন। ... কেউ যদি নিখুঁত চোখে না দেখে, তবে আপনার অবদানটি তাঁর চোখেই পড়বে না। কেবল বিরল ভূতাত্ত্বিকদের চোখেই আপনার পলিটুকু ধরা দিতে পারে।’ এভরিস্টিভজবসভিডিও নামের একজন ব্যবহারকারী এ সাক্ষাত্কারের ভিডিওটি পোস্ট করেছে। এটি ‘স্টিভ জবস: ভিশনারি এন্টারপ্রেনার’ শিরোনামের তথ্যচিত্রের খণ্ডিতাংশ। ১৯৯৪ সালে নেওয়া জবসের সাক্ষাত্কারের ওপরে ভিত্তি করে ওই তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এ সাক্ষাত্কার এত দিন অপ্রকাশিত ছিল।

স্টিভ জবসের কয়েকটি অবাক সত্য
স্টিভ জবস আমাদের মাঝে অনেক দিন বেঁচে থাকবেন। সত্যটা এই যে, তিনি আমাদের কোটি মানুষের জীবন যাত্রাকে পাল্টে দিয়েছেন। চলুন দেখি সেই মানুষটি সম্পর্কে ১০টি কম জানা সত্য, যা আপনাকে অবাক করতে পারে।
* তিনি বারবার নিশ্চিত করে বলেন, আমি জীবনে যে দুই-তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস করেছি, এটা হলো তাদের একটি। তিনি এলএসডি (LSD- lysergic acid diethylamide) ড্রাগটি নিয়েছিলেন। এটা একটি সাংঘাতিক ড্রাগ, যার মাধ্যমে আপনার মুড পরিবর্তন হতে পারে। এটা নেয়ার পর একজনের মুড খুব তাড়াতাড়ি বিভিন্ন স্তরে চলে যেতে পারে এবং এটা পুরোটাই আন-প্রেডিকট্যাবল—কেউ বলতে পারবে না এই ড্রাগ নিলে ঠিক কী ঘটবে। তার ইমোশন এক স্তর থেকে ভিন্ন স্তরে ওঠানামা করবে এবং এটা দিয়ে হেলুসিনেশন হতে পারে।
* স্টিভ তার বয়সের দ্বিতীয় দশকে ফোক গায়িকা জোয়ান বায়েসের সঙ্গে ডেট করেন।
* স্টিভ জবস পশু শিকারে বিশ্বাস করতেন না এবং তাই তিনি ভেজিটেরিয়ান খাবার গ্রহণ করতেন।
* পিক্সার  (PIXER) স্টুডিও প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। স্টিভ ১৯৮৬ সালে জর্জ লুকাসের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে পিক্সার কিনে নেন এবং পিক্সার থেকে ‘টয় স্টোরি’ নামের বিখ্যাত এনিমেটেড সিনেমা বানিয়ে চরম সফলতা নিয়ে আসেন।
* ২০০৬ সালে ডিজনি যখন পিক্সারকে কিনে নেয়, তখন স্টিভ ডিজনির বোর্ডে চলে আসেন এবং তিনিই ছিলেন এককভাবে সবচেয়ে বড় শেয়ারের মালিক।
* স্টিভ অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি একটি ফ্রিকোয়েন্সি কাউন্টার অ্যাসেম্বলি করছিলেন। এটা তাকে করতে দিয়েছিল বিখ্যাত কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান এইচপি। স্টিভ জবস একদিন এইচ-পি’র কো-ফাউন্ডার উইলিয়াম হিউলেটকে টেলিফোন করে বলেন, ওখানে একটা পার্টসের অভাব রয়েছে। হিউলেট তার সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলেন এবং পরের দিন এক ব্যাগভর্তি পার্টস পাঠিয়ে দেন। আর জবসকে পরের গ্রীষ্মে ইন্টার্ন করার অফার দেন।
* দুই বন্ধু মিলে প্রথমে যে জিনিসটি তৈরি করেন সেটা হলো—একটা ব্লু বক্স। এই ব্লু বক্সেটির কাজ ছিল টেলিফোনকে বোকা বানিয়ে বিনামূল্য পৃথিবীর যে কোনো স্থানে কথা বলা যেত। এটা যদিও আইনসিদ্ধ ছিল না, কিন্তু মানুষ এটা পছন্দ করেছিল। এটা করে তারা ৬ হাজার ডলারের মতো যোগাড় করেছিল।
* ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বলেছিলেন, আমার ডর্ম ছিল না। তাই আমি বন্ধুদের রুমের সামনে বারান্দায় ঘুমাতাম। আমি কোকের বোতল যোগাড় করতাম, যা ফেরত দিলে ৫ সেন্টস করে পাওয়া যেত, যা দিয়ে আমি খাবার কিনতাম। আর সপ্তাহে একবার ভালো খাবারের জন্য প্রতি রোববার আমি সাত মাইল হেঁটে শহরের আরেক প্রান্তে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম।
* অ্যাপলের কয়েক হাজার প্যাটেম্লট রয়েছে। তার ভেতর ৩১৭টিতে তার নাম রয়েছে। এমনকি তিনি অ্যাপল স্টোরের ভেতর যে কাচের সিঁড়িটা রয়েছে, সেটার ডিজাইনও প্যাটেম্লট করে রাখেন।
* স্টিভ জবসের ২০০৭ সাল মডেলের মার্সিডিস বেঞ্চ এসএল-৫৫ গাড়ি ছিল। তিনি সেই গাড়িটি কয়েক বছর কোনো রকম লাইসেন্স প্লেট ছাড়াই চালান।

স্টিভ জবস এবং বিশ্ববাসীর জন্য তার অনুপ্রেরণা মূলক কিছু কথা
স্টিভ জবস মারা যান ৫৬ বছর বয়সে। তিনি এই অল্প সময়েই রেখে গেছেন সমগ্র জাঁতির জন্য বিশাল অবদান এবং কর্ম প্রেরণা। তাই আজকে ব্লগিং এ তার কিছু অনুপ্রেরণামূলক কথা জানবো।

Follow your heart
প্রথমে আপনি আপনার মনকে বুঝতে চেষ্টা করুন, দেখতে চেষ্টা করুন আপনার মন কি চাইছে, আপনাকে মূলত কি করতে বলছে, কোন পথে চলতে বলছে। আপনি আপনার মনকে গুরুত্ব দিন, গুরুত্ব দিন তার দেখানো পথে চলে। তবেই আপনি একদিন হয়ে উঠেতে পারবেন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন।
Almost everything–all external expectations, all pride, all fear of embarrassment or failure–these things just fall away in the face of death, leaving only what is truly important. Remembering that you are going to die is the best way I know to avoid the trap of thinking you have something to lose. You are already naked. There is no reason not to follow your heart.
stive jobs

Trust yourself
বিশ্বাস রাখুন নিজের প্রতি। নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি। আপনি যদি বিশ্বাস করে থাকেন যে আপনি আপনার কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে নেবেন ব্লগের দ্বারা তবে বিশ্বাস রাখুন নিজের প্রতি। কখনো দমে যাবেন নাহ। প্রয়োজনে ঝুঁকি নিন, তবু কখনো পিছু হাঁটবেন না। দেখবেন একদিন আপনার বিশ্বাসই আপনাকে সঠিক পথের সন্ধান দেবে।
You can’t connect the dots looking forward; you can only connect them looking backwards. So you have to trust that the dots will somehow connect in your future. You have to trust in something — your gut, destiny, life, karma, whatever. This approach has never let me down, and it has made all the difference in my life.

Love what you do
ভালোবাসুন আপনার লক্ষ্যকে, আপনার ব্লগিং কে। আপনার ব্লগিং এর মাঝে ঢেলে দিন আপনার ভেতরের থাকা সকল আবেগ, কারণ আপনার আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা , সম্মানই আপনাকে ব্যাপক ভাবে উৎসাহিত করবে আপনার সামনে এগিয়ে চলার প্রতি।
Your work is going to fill a large part of your life, and the only way to be truly satisfied is to do what you believe is great work. And the only way to do great work is to love what you do.

Go for a home run
কখনো আপনার লেখার মান নিয়ে কার্পণ্যতা করবেন না। এতে দেখা যায় আপনি আলসেমি বা কোন বেস্ততার কারণে আপনার লেখার মাঝে কার্পণ্যতা করে তা শুধু মাত্র পাবলিশ করার জন্য লিখেছেন! তবে চিন্তা করে দেখুন আপনার এই কাজটির জন্য আপনার সদ্য পাবলিশ হওয়া নিন্মমানের লেখা অনেকেরই পড়তে হচ্ছে, যার ফলে দেখা যাচ্ছে আগামীতে তারা ভালো পোস্টেকেও আগের পোষ্টের মতো খারাপ ভেবে ওপেন করে দেখছে না! তাই কিছু লিখতে হলে অবশ্যই সময় নিয়ে ভালোভাবে লিখুন। হোক না তা মাসে ১ টি! তারপরেও এমন ভাবে লেখুন যেন আপনার পোষ্টের প্রতি তাদের আকর্ষণ প্রতিনিয়তই রয়ে যায়। গণহারে পোষ্ট পাবলিশ করতেই হবে এমন তো আর কোন নিয়ম নেই।
Be a yardstick of quality. Some people aren’t used to an environment where excellence is expected. One home run is much better than two doubles.

Pick carefully
আপনি বেস্ত? সময় অনেক সংক্ষেপ? তারপরেও আপনার ব্লগে পোষ্ট দেয়া অতান্ত প্রয়োজন? তাহলে আপনার লেখার বিষয় বেছে নিন খুব যত্নসহকারে! এতে করে আপনি আপনার হাতে থাকা সময়ে সঠিক আর্টিকেল লিখতে পাড়বেন, নয়তো দেখা যাবে ১৫ মিনিটের একটি আর্টিকেল এর বিষয় নিয়ে আপনি তা ৫ মিনিটে লিখে পোষ্ট দিয়েছেন। যা কক্ষনোই সঠিক ভাবে পরিপূর্ণ নয়।
People think focus means saying yes to the thing you’ve got to focus on. It means saying no to the hundred other good ideas that there are. You have to pick carefully.

Work hard to make it simple
পরিশ্রম করুন, কঠিন পরিশ্রম। আপনার কাজকে সহজ করতেই আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। কারণ একবার পরিশ্রম করে আপনি যদি আপনার কাজকে সঠিক ভাবে বুঝতে ফেলতে সক্ষম হন, তবে পরবর্তী সময়ে আপনাকে কোন কঠিন পরিশ্রম না করেই এর ফায়দা উঠিয়ে চলতে পাড়বেন।
Design is not just what it looks like and feels like. Design is how it works. Simple can be harder than complex. You have to work hard to get your thinking clean to make it simple.

Steal great ideas
বেশি করে পড়ুন। এতে করে আপনার ভেতরের আইডিয়া গুলো, ইচ্ছে শক্তি গুলো আরো ব্যাপক ভাবে প্রসারিত হবে। আপনার কাছে নতুন, নতুন আইডিয়া আসার চেষ্টা করবে। ঠিক তখনি আপনি আপনার নিজের কাছ থেকেই আইডিয়া গুলো চুরি করার চেষ্টা করুন, চেষ্টা করুন বের করে নিয়ে এসে তা সমগ্র বিশ্ববাসির কাছে তুলে ধরতে।
We have always been shameless about stealing great ideas.

Your goal isn’t to make money
আর হ্যাঁ যে কথাটি সকলেই বলে থাকে তা হচ্ছে “আপনি আপনার লক্ষ্য কক্ষনো টাকা চাই, টাকা চাই ধাঁচের করবেন না। সব সময় চেষ্টা করুন সৃজনশীল কিছু করতে”। টাকাকে তাহলে অবশ্যই কোন না কোনোদিন আপনার কাছে ধরা দিতেই হবে।
Apple’s goal isn’t to make money. Our goal is to design and develop and bring to market good products. We trust as a consequence of that, people will like them, and as another consequence, we’ll make some money.

Don’t lose faith
সর্বশেষে আপনাকে বলবো প্লীজ আপনি কখনোই আপনার মনের মাঝে জাগ্রত হওয়া সত্যিকারের বিশ্বাস হারায়েন না। আমাদের সবচে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা অল্পতেই বিশ্বাস হারাই, অন্তত নিজের উপড় বিশ্বাস। যার ফলে আমরা অন্যদের দ্বারা প্রায় সমই ধোঁকা খেয়ে থাকি। Sometimes life hits you in the head with a brick. Don’t lose faith.

এক নজরে স্টিভ জবস
জন্মঃ ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৫৫, সান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া।
বাসস্থানঃ পালো অ্যালটো, ক্যালিফোর্নিয়া।
বাবা : জোয়ান ক্যারোল।
মাতা : আবদুল ফাত্তাহ জন জান্দালি।
পালক মা-বাবা : পল ও ক্লারা জবস।
বোন : সাহিত্যিক মোনা সিম্পসন।
প্রথম স্কুল : ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুল।
অ্যাপল : ১৯৭৬ সালে বন্ধুর সঙ্গে মিলে অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেন।
বিয়ে : ১৯৯১ সালে বিয়ে করেন লরেনকে।
চলচ্চিত্র : ১৯৯৫ সালে ‘টয় স্টোরি’ প্রযোজনা করেন।
অ্যাপল বিদায় : ২৪ আগস্ট ২০১১।
রেখে গেলেন : স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য ভক্ত।
জাতীয়তাঃ মার্কিন
অ্যালমা ম্যাটারঃ রীড কলেজ (ড্রপড আউট)।
পেশাঃ প্রযুক্তিবিদ।
বেতনঃ ১ BILLION মার্কিন ডলার।
মোট সম্পত্তিঃ $৮.৩ বিলিয়ন (২০১১)।
ধর্মঃ বৌদ্ধ।
দম্পতিঃ লরেন পাওয়েল (১৯৯১-২০১১)।
মৃত্যুঃ অক্টোবর ৫, ২০১১, পালো অ্যালকো, ক্যালিফোর্নিয়া।

No comments:

Post a Comment