পর্দা নারীদের জন্য অভিশাপ না আশীর্বাদ |
এ্যাডভোকেট ইফফাত আরা::মানুষের
ব্যক্তিত্ব বিকাশের মাধ্যমগুলির মধ্যে পোষাক অন্যতম। মার্জিত ও শালীন
পোষাকধারী ব্যক্তিত্বের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধের উম্মেষ ঘটে। কিন্তু
বর্তমান সময়ে নারীরা যে সব পোষাক-পরিচ্ছদ পরছে তাতে তাদের ব্যক্তিত্বের
পরিবর্তে ব্যক্তিত্বহীনতাই প্রকাশ পাচ্ছে।
পাশ্চাত্য সমাজের দিকে দৃষ্টিপাত করলে
নারী ও পুরষের পোষাকের পার্থক্য আমাদের সহজেই চোখে পড়ে। ইউরোপ বা
আমেরিকায় একজন পুরুষ মার্জিত রুচিসম্মত শালীন পোষাক পরিধান করে
পক্ষান্তরে এই অঞ্চলের দুজন পোষাক পরিহিতা নারীর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা
যাবে তারা দুজনেই নিজেকে কে কত বেশী উম্মুক্ত করে রাখতে পারে সে
প্রতিযোগীতাতেই যেন নেমেছে। এই পর্দাহীনতার করাল গ্রাস থেকে প্রাচ্যের
দেশমূহও রক্ষা পাচ্ছে না।
ফ্রয়েডীয় চিকিত্সাবিদদের দাবি হচ্ছে, পর্দা লোকদের মনে কৌতুহল বা অনুসন্ধ্যিৎসা সৃষ্টি করে। এই কারণে বিকৃত আবেগের প্রতিক্রিয়া তাদের জন্য মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়। একটি পর্দাহীন বন্ধনহীন নির্লজ্জ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাপূর্ন সমাজ যে কি সাংঘাতিক পরিণতির সম্মুখীন হয় তা পাশ্চাত্য সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলে সহজেই বুঝতে পারা যায়। মানসিক বিকৃতির সবচাইতে বেশী দৃষ্টান্ত তো উপরোক্ত সমাজেই লক্ষণীয় । সবচাইতে বেশী অপরাধ প্রবণতা ও ঘটনা-দূর্ঘটনা কি এ সমাজে বেশী পাওয়া যাচ্ছে না? সুতরাং সার্বিক বিশ্লেষণ অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, পাশ্চাত্য ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ব বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তারই বিভ্রান্তিতে পড়ে যেসব সামাজিক ,নৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও নীতি গৃহিত হয়েছে। তা সবই সম্পূর্ণরূপে ভুল ও মারাত্মক । এ ভুল চিন্তা ও দর্শন ইউরোপে যখন সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়, তখন অনতিবিলম্বে ইউরোপীয় সভ্যতার প্রভাবধীন প্রাচ্য দেশসমূহে তা ব্যাপক প্রচার লাভ করে এবং তারই প্রভাবে পড়ে প্রাচ্যের মুসলিম দেশ ও সমাজের পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ম নীতিকে ভঙ্গ করে পর্দাহীন ও নগ্নতায় সয়লাব বইয়ে দেয়া হয়। নারী পার্থিব প্রয়োজনে যখন গৃহের বাইরে পদার্পন করবে তখন সে নারী হয়ে নয়, মানুষ হয়ে পদার্পন করবে এটাই সঙ্গতভাবে আল্লাহর বিধান। এ ব্যাপারে সুরা আন-নূরের ৩১ আয়াতে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন, “ হে নবী! মুমিন নারীদের বল, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং আব্র“র হিফাজত করে। আর তারা যেন সাধারণত ঃ যা প্রকাশিত হয়ে পড়ে, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তারা যেন নিজেদের বক্ষদেশের উপর মাথার ওড়নার আঁচল ঝুলিয়ে রাখে।” অর্থাৎ নারী অবশ্যই এমন পোষাক পরিধান করবে যা তারা আব্র“কে নিশ্চিতভাবে ঢেকে দেবে এবং তার ব্যক্তিত্বকে যথাযথভাবে পরিস্ফুটিত করবে। কিন্তু বর্তমান সময়ের পোষাক নারীর ব্যক্তিত্বকে পুরোপুরি খর্ব করে আর বোকামীর বেড়াজালে আবদ্ধ নারী এটাকেই নারী স্বাধীনতা মনে করে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই দেখা যায় নারীর পোষাক পরিকল্পনা, পোষাক প্রস্তুত ইত্যাদি কোনটাই নারী নিজে করে না। এ ব্যাপারে তার নিজস্ব কোন স্বাধীনতাই সে নিজের জন্য রাখেনি। বিশ্ব জুড়ে যত পোষাক প্রদর্শনী এবং ফ্যাশন শো হয়ে থাকে তা অধিকাংশ নারীর পোষাকেরই। নারীর পোষাক পরিকল্পনা ও প্রদর্শনী সমূহের আয়োজক অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষরাই হয়ে থাকে। পুরুষ তার কল্পনায় নারীকে যেভাবে দেখতে চায়, নারীর জন্য সে সেভাবেই পোষাক পরিকল্পনা করে থাকে। এভাবে যতই দিন যাচ্ছে নারী ততই পণ্যসামগ্রীতে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু নারী যদি ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী পর্দা অবলম্বন করে তবে সমাজ তাকে মানুষ হিসাবে মুল্যায়ন করত- পণ্য হিসাবে নয। আমাদের প্রাচ্যের মুসলিম নারীদের একটি বদ্ধমুল ধারণা যে, পাশ্চাত্যের পর্দাহীনতা নারীদের মুল্যায়ন করেছে পক্ষান্তরে ইসলামের পর্দা ব্যবস্থা নারীদের অবমুল্যায়ন তথা কোণঠাসা করেছে। কিন্তু সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, একমাত্র ইসলামই নারীদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। পাশ্চাত্য পন্ডিত ফ্রান্সের হেনরী দ্যা মন্থারল্যাম তার এক উদ্বৃতিতে বলেন, “ নারীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা পুরুষের জন্য কঠিন নয় বরং এটি অসম্ভব । একজন নারীকে একজন পুরুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু একজন পুরুষকে জীবনের জন্য এবং সকল নারীর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ” ঠিক এভাবেই পাশ্চাত্য দার্শনিক এবং বিভিন্ন পন্ডিতেরা অতি সন্দুর এবং হৃদয়গ্রাহী যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন যে, নারী পুরুষের ভোগের সামগ্রীর অতিরিক্ত কিছুই নয়। পৃথিবীর সকল নারীকে ভোগের জন্য এক একজন পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমন কথা পুরুষ ও নারীর স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন না। আল্লাহ সুতরাং আর রুম এর ২১ নং আয়াতে বলেছেন , “ এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নির্দশন: তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের স্ত্রী। স্বামীকে ( স্বামীর জন্য স্ত্রী এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীকে), যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও দয়া সৃষ্টি করেছেন । চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নির্দশণ রয়েছে।” আল্লাহ তা’য়ালার এ বাণী দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাচ্ছে যে, একজন নারীকে স্ত্রী হিসাবে একজন পুরুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। পৃথিবীর অপর সকল পুরুষের কাছে সে একজন মানুষ। একমাত্র পর্দাই তাকে সকল মানুষের কাছে নারী হিসাবে নয় মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে। সুতরাং প্রকৃত বাস্তবতা এটাই যে নারী যেহেতু মানুষ, সেহেতু তাকে বাইরে যেতেই হয়। আর তাই কুরআন মাজীদ তাকে নারী সেজে নয়, মানুষ হয়েই বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই সাথে নারীকে মানুষ হয়েই বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই সাথে নারীকে মানুষ হয়ে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজনীয় পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর দেয়া পর্দাকে উপেক্ষা করায় বর্তমান সমাজে নারী স্বাধীনতার নামে বেড়ে গিয়েছে নারীর স্বেচ্ছাচারিতা, নারীর অবমাননা, নারীর বেহায়াপনা। পাশ্চাত্যের অনুকরণে চলতে গিয়ে সমাজে নারীরা হচ্ছে, লান্থিতা, নির্যাতিতা । আর যার ফলশ্র“তিতে সমাজ হচ্ছে কলুষিত, নগর সভ্রতা স্তম্ভিত এবং বেড়ে যাচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া প্রেম, ধর্ষণ, ব্যভিচার। সুতরাং মুসলমান বোনেরা আপনারা আল্লাহর দেয়া অপূর্ব বিধি পর্দাকে অভিশাপ মনে না করে আর্শিবাদ মনে করুন এবং নিজেদেরকে পাপ পঙ্কিলতার উর্ধ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করুন। আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিম নারীকে পর্দা করার তওফিক দান করুন। (আমীন) |
No comments:
Post a Comment